জুতাচোর
সঞ্জীব ধর
(১)
রাত্রি হয়তো চলে যাওয়া জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাতে কী ? নিদ্রাকে তো আনা যাবে
না। বছরে এমন সুযোগ আর কয়টা আসে? তাই তারা ছোটে।দৌড় দেয়। আবার আসে ভদ্রবেশে।
তাড়াতাড়ি একটা চুমু খায়, বাকিরা গোলাপ জল ছিটালেও তাদের সে সৌভাগ্যটুকু হয় না।
তারপর বেরিয়ে যাওয়ার পথে এক জোড়া। আসে খালি পায়ে, যায় ভরা পায়ে। সময় যত গড়ায়
ততই মানুষের ঢল বাড়তে থাকে। যারা বলে মানুষের মাঝে ধর্মকর্ম কমে যাচ্ছে তারা
মানুষের এ ঢল দেখে আশ্বস্ত হয়। না; কমতেছে না বরং দ্বিগুণ হারে বাড়তেছে।
একদিকে পূণ্য অর্জনের লোভে মানুষ ছোটে, অন্যদিকে তারা পেটের দায়ে ছোটে। একটা
পরকালের জন্য, অন্যটা ইহকালের জন্য।সম্পূর্ণ দলটির সদস্য সংখ্যা মাত্র ৪ জন
যার মধ্যে দুজনের বয়স দশের নিচে,বাকি দুজনের বয়স পনের ষোলের মত হবে।এদের
নামকরণ করতে আমার একটু বেশ অসুবিধা হচ্ছে। কারণ এদের মা-বাবা কি নাম রেখেছিল
সেটা আমার যেমন জানা নেই, তেমনি তাদেরও জানা নেই। হিন্দু না মুসলিম সেটা
থানায় চাপা পড়া মামলার ফাইলের মত চাপা পড়ে গেছে। তবে খৎনা হয়নি কারো। নামকরণ
না হলেও ওরা নিজদের মধ্যে নামকরণ করে নেয়। একজনের প্রায় দু'তিনটা নাম আছে।
এগুলো বিশেষ সুবিধার্থে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
নতুন ও বেশি দামী জুতা তেমন মেলে না। ওগুলো টাকা দিয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা
হচ্ছে। তবে যা পাচ্ছে তাতেই তারা খুশি।
"ব্যাচিবার সমত কি হম হষ্ট অইবু না? আলার বাবু সাব বেগ্গুন কিট্টুস" - ঝিমুতে
ঝিমুতে ভাবতে থাকে বয়োজ্যেষ্ঠ চোরটা।তার সঙ্গীরা এখন কোথায় সে জানে না।তবে এটা
জানে তারা নিশ্চয় বসে নেই। সে দলনেতা। তার এ ভাবে বসে থাকা উচিত নয়। সাতপাঁচ
ভেবে শরীরটাকে ঝাঁকুনি দিয়ে আবার উঠে দাঁড়ায় সে। রাস্তায় উঠে মিশে যায় ভীড়ে
মধ্যে। খালি পায়ে চলতে গিয়ে হটাৎ পায়ের নিচে কাঁটা ফুটার যন্ত্রণা অনুভব করে
সে। "ওমা রে " করে চিৎকার উঠে রাস্তাতে বসে পড়ে সে । দু'তিন জন সহানুভূতির
সাথে তার দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু ধর্ম কাজে দেরী অনুচিত বিধায় তারা বেশিক্ষণ
দাঁড়ায় না।শেষে নিজেই কাঁটাটা টেনে বের করে সে। রক্তস্বল্পতার কারণে রক্তক্ষরণ
থেকে বেঁচে যায়।কিন্তু দাঁড়াতে পারে না সে। মনে মনে ভাবে, পীর সাহেব কী
প্রসিদ্ধ! কুকর্ম টা পা দিয়ে করে বলে শাস্তিটা পায়েই পেয়েছে। তবে এটা সতর্ক
সংকেত মাত্র। পরবর্তী শাস্তি কত ভয়াবহ হতে পারে তা ভাবতে গিয়ে তার মস্তিষ্ক
হ্যাং হয়ে যাওয়া আইসিটি যন্ত্রের মত কিছুক্ষণ কাজ করে না।কিছুক্ষণ পর উঠে
দাঁড়ায়।তারপর খোড়াতে খোড়াতে পথ চলে। গন্তব্য স্থান অবশ্য পাল্টে ফেলতে বাধ্য
হয় সে।
(২)
দিনটা ছিল শুক্রবার। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। সন্ধ্যার নামার সাথে কৃত্রিম আলোয়
সজ্জিত হয়ে গেছে সম্পূর্ণ শহর। ব্যস্ত নগরী যেন আরো ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
উপর্যুক্ত সময়। মাথার উপর ছাতা হিসাবে আছে মস্ত বড় ফ্লাইওভারটা। আলোর
ব্যবস্থা বিপদ ডেকে আনতে পারে। রাস্তার ফ্লাট লাইটগুলোতে যতটুকু ব্যবস্থা হয়
ততটুকুই যথেষ্ট। যেখান দিয়ে পথচারী পারাপার করে তার দু'পাশে সারি সারি সাজিয়ে
দেওয়া হয়েছে।কয়েকজন আসে, এক আধটু দেখে,তারপর চলে যায়। কারো কারো পায়ে নিজেরাই
পরিয়ে দেয়। কিন্তু লাভ হয় না। কয়েকজনের পায়ে পরিয়ে দেওয়ার পরেও না কিনে চলে
যায় তখন একজন অভিমানের সুরে বলে, "আর ব্যাইচতাম ন,গুডাই ফেল।" এভাবে চলতে থাকে
এই জুতাচোরদের জীবন সংগ্রাম।
সময় এগিয়ে চলে। ঘড়ির কাটা ১১টা পেরিয়ে যায়। একজন বলে," আজিয়া আর অইতো ন।"
আরেকজন বলে,"থিঁয়া, আরেক্ষেনা চাই।" ঠিক এই সময় একজন এসে দুএক জোড়া পায়ে দিয়ে
দেখে। সব থেকে ছোট দুজন লোকটার পায়ে জুতা পরিয়ে দিতে ব্যস্ত।বাকি দুজনে মনে
মনে স্রষ্টা ডাকছে।
লোকটা জিজ্ঞাসা করে, "দাম কত?"
--- "তিন শ"
---"ব্যাটা চোর। চুরি করা মালের দাম তিনশ? ধর, একশ দিচ্ছি।"
ছোট চোরটা বলল, "এত দামী জুতা, মাত্র একশ?হবে না, হবে না।"
লোকটা ধমক দিয়ে বলল, "চুপ চোরের ব্যাটা চোর।"
একশ টাকার নোটটা ওদের দিকে ছুড়ে দিয়ে জুতা জোড়া নিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটা দিল।
ওরা সবাই ওর গমন পথের দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তারপর দলের
কনিষ্ঠ সদস্য বলে উঠে, "আলা, জুতা চোর "
এখন আপনারাই বলুন তো আসল জুতা চোর কে?
Regards,
sanjib dhar | sanjibkumardhar8@gmail.com
Note: This email was sent via the Contact Form gadget on
https://sahityokonika.blogspot.com
সঞ্জীব ধর
(১)
রাত্রি হয়তো চলে যাওয়া জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাতে কী ? নিদ্রাকে তো আনা যাবে
না। বছরে এমন সুযোগ আর কয়টা আসে? তাই তারা ছোটে।দৌড় দেয়। আবার আসে ভদ্রবেশে।
তাড়াতাড়ি একটা চুমু খায়, বাকিরা গোলাপ জল ছিটালেও তাদের সে সৌভাগ্যটুকু হয় না।
তারপর বেরিয়ে যাওয়ার পথে এক জোড়া। আসে খালি পায়ে, যায় ভরা পায়ে। সময় যত গড়ায়
ততই মানুষের ঢল বাড়তে থাকে। যারা বলে মানুষের মাঝে ধর্মকর্ম কমে যাচ্ছে তারা
মানুষের এ ঢল দেখে আশ্বস্ত হয়। না; কমতেছে না বরং দ্বিগুণ হারে বাড়তেছে।
একদিকে পূণ্য অর্জনের লোভে মানুষ ছোটে, অন্যদিকে তারা পেটের দায়ে ছোটে। একটা
পরকালের জন্য, অন্যটা ইহকালের জন্য।সম্পূর্ণ দলটির সদস্য সংখ্যা মাত্র ৪ জন
যার মধ্যে দুজনের বয়স দশের নিচে,বাকি দুজনের বয়স পনের ষোলের মত হবে।এদের
নামকরণ করতে আমার একটু বেশ অসুবিধা হচ্ছে। কারণ এদের মা-বাবা কি নাম রেখেছিল
সেটা আমার যেমন জানা নেই, তেমনি তাদেরও জানা নেই। হিন্দু না মুসলিম সেটা
থানায় চাপা পড়া মামলার ফাইলের মত চাপা পড়ে গেছে। তবে খৎনা হয়নি কারো। নামকরণ
না হলেও ওরা নিজদের মধ্যে নামকরণ করে নেয়। একজনের প্রায় দু'তিনটা নাম আছে।
এগুলো বিশেষ সুবিধার্থে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
নতুন ও বেশি দামী জুতা তেমন মেলে না। ওগুলো টাকা দিয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা
হচ্ছে। তবে যা পাচ্ছে তাতেই তারা খুশি।
"ব্যাচিবার সমত কি হম হষ্ট অইবু না? আলার বাবু সাব বেগ্গুন কিট্টুস" - ঝিমুতে
ঝিমুতে ভাবতে থাকে বয়োজ্যেষ্ঠ চোরটা।তার সঙ্গীরা এখন কোথায় সে জানে না।তবে এটা
জানে তারা নিশ্চয় বসে নেই। সে দলনেতা। তার এ ভাবে বসে থাকা উচিত নয়। সাতপাঁচ
ভেবে শরীরটাকে ঝাঁকুনি দিয়ে আবার উঠে দাঁড়ায় সে। রাস্তায় উঠে মিশে যায় ভীড়ে
মধ্যে। খালি পায়ে চলতে গিয়ে হটাৎ পায়ের নিচে কাঁটা ফুটার যন্ত্রণা অনুভব করে
সে। "ওমা রে " করে চিৎকার উঠে রাস্তাতে বসে পড়ে সে । দু'তিন জন সহানুভূতির
সাথে তার দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু ধর্ম কাজে দেরী অনুচিত বিধায় তারা বেশিক্ষণ
দাঁড়ায় না।শেষে নিজেই কাঁটাটা টেনে বের করে সে। রক্তস্বল্পতার কারণে রক্তক্ষরণ
থেকে বেঁচে যায়।কিন্তু দাঁড়াতে পারে না সে। মনে মনে ভাবে, পীর সাহেব কী
প্রসিদ্ধ! কুকর্ম টা পা দিয়ে করে বলে শাস্তিটা পায়েই পেয়েছে। তবে এটা সতর্ক
সংকেত মাত্র। পরবর্তী শাস্তি কত ভয়াবহ হতে পারে তা ভাবতে গিয়ে তার মস্তিষ্ক
হ্যাং হয়ে যাওয়া আইসিটি যন্ত্রের মত কিছুক্ষণ কাজ করে না।কিছুক্ষণ পর উঠে
দাঁড়ায়।তারপর খোড়াতে খোড়াতে পথ চলে। গন্তব্য স্থান অবশ্য পাল্টে ফেলতে বাধ্য
হয় সে।
(২)
দিনটা ছিল শুক্রবার। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। সন্ধ্যার নামার সাথে কৃত্রিম আলোয়
সজ্জিত হয়ে গেছে সম্পূর্ণ শহর। ব্যস্ত নগরী যেন আরো ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
উপর্যুক্ত সময়। মাথার উপর ছাতা হিসাবে আছে মস্ত বড় ফ্লাইওভারটা। আলোর
ব্যবস্থা বিপদ ডেকে আনতে পারে। রাস্তার ফ্লাট লাইটগুলোতে যতটুকু ব্যবস্থা হয়
ততটুকুই যথেষ্ট। যেখান দিয়ে পথচারী পারাপার করে তার দু'পাশে সারি সারি সাজিয়ে
দেওয়া হয়েছে।কয়েকজন আসে, এক আধটু দেখে,তারপর চলে যায়। কারো কারো পায়ে নিজেরাই
পরিয়ে দেয়। কিন্তু লাভ হয় না। কয়েকজনের পায়ে পরিয়ে দেওয়ার পরেও না কিনে চলে
যায় তখন একজন অভিমানের সুরে বলে, "আর ব্যাইচতাম ন,গুডাই ফেল।" এভাবে চলতে থাকে
এই জুতাচোরদের জীবন সংগ্রাম।
সময় এগিয়ে চলে। ঘড়ির কাটা ১১টা পেরিয়ে যায়। একজন বলে," আজিয়া আর অইতো ন।"
আরেকজন বলে,"থিঁয়া, আরেক্ষেনা চাই।" ঠিক এই সময় একজন এসে দুএক জোড়া পায়ে দিয়ে
দেখে। সব থেকে ছোট দুজন লোকটার পায়ে জুতা পরিয়ে দিতে ব্যস্ত।বাকি দুজনে মনে
মনে স্রষ্টা ডাকছে।
লোকটা জিজ্ঞাসা করে, "দাম কত?"
--- "তিন শ"
---"ব্যাটা চোর। চুরি করা মালের দাম তিনশ? ধর, একশ দিচ্ছি।"
ছোট চোরটা বলল, "এত দামী জুতা, মাত্র একশ?হবে না, হবে না।"
লোকটা ধমক দিয়ে বলল, "চুপ চোরের ব্যাটা চোর।"
একশ টাকার নোটটা ওদের দিকে ছুড়ে দিয়ে জুতা জোড়া নিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটা দিল।
ওরা সবাই ওর গমন পথের দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তারপর দলের
কনিষ্ঠ সদস্য বলে উঠে, "আলা, জুতা চোর "
এখন আপনারাই বলুন তো আসল জুতা চোর কে?
Regards,
sanjib dhar | sanjibkumardhar8@gmail.com
Note: This email was sent via the Contact Form gadget on
https://sahityokonika.blogspot.com
No comments:
Post a Comment