আপনার লেখা গল্প কিংবা কবিতাটি পোস্ট করুন এখানে। মেসেজ বক্সে লেখার শিরোনাম, লেখকের নামসহ লিখা দিন।

Name

Email *

Message *

দারুন ছেলে

( দারুন ছেলে )
--পলাশ মন্ডল ।
২৬/২/২০২০
সেদিন দেখি পুবের পাড়ার
ষষ্ঠীচরণ রায়
গাঁয়ের পথে কোথায় যেন
ছুটছে খালি পায়ে ।

"যাচ্ছো কোথায় হনহনিয়ে ?
দিচ্ছো নাকি মেয়ের বিয়ে ?
মেয়েটি তোমার মিষ্টি অতি ;
দেখতে শুনতে লক্ষীমতি ;
বিদ্যে গুনেও সরস্বতী ।
মেয়ের যেমন তুলনা নাই,
তেমন কিন্তু ছেলেটি চাই ।
মদ, জুয়ো, ভাং, গাঁজাখোরে
সমাজ এখন গেছে ভরে ।
চোর, লম্পট, দামড়া, গোঁয়ার -
দেশটি যেন ষাঁড়ের খোয়াড় ।
তা , বলো না , ছেলে কেমন ?
উঁহু , চলবেনাকো যেমন তেমন ।
হোক না বাঙাল , হোক না ঘটি ,
বাজিয়ে নিয়ো চরিত্রটি ।
চুপটি করে বলছি শোনো ,
খোঁজ নিতে নেই লজ্জা কোনো ;
দু'চার খানা লোক লাগিও ,
একান ওকান খবর নিও ।"

ষষ্ঠীচরণ বললো ক্ষেপে ,
"যাও তো নিজের পথটি মেপে ।
গায়ে পড়ে জ্ঞান দিও না ।
ছেলে তো নয়, কাঁচা সোনা ।
এমন জবর খাসা ছেলে
হাজারটিতে একটি মেলে ।
নয় সে বলদ , নয় সে বেকার ;
লোকাল ট্রেনের টিকিট চেকার ।
ঊনিশ হাজার মাসিক বেতন ;
থাকবে মেয়ে রানীর মতন ।
চাগরি করে পূর্ব রেলে ।
দারুন ছেলে , দারুন ছেলে !"

"তাই নাকি ? তা , দিচ্ছো কি কি ?
ষোলো আনায় আঠারো সিকি ?"

চোখ নাচিয়ে একটু কেশে,
ষষ্ঠীচরণ বললে এসে
ফিসফিসিয়ে কানের কাছে,
"দেখলে হবে ? খচ্চা আছে ।
গয়না, টিভি, ফ্রিজ, ঘড়ি,
ফার্নিচারও কয়েক লরি ।
ক্যাশের কথাও পাকাপাকি ;
দু'লাখ নগদ, দু'লাখ বাকি ।
কি করবো ভাই, এমন ছেলে,
হাতের থেকে ফসকে গেলে ?
আগুন এখন ছেলের বাজার ।
গাঁটের দিকে তাকাইনি আর ।
চাগরি করে পূর্ব রেলে,
আহা, দারুন ছেলে, দারুন ছেলে !"

দিন, মাস যায়, বছর গড়ায় ;
মেয়েটি এখন উনুন ধরায়
শুকনো পাতায়, ভেজা কাঠে ;
বাসন মাজে, বাটনা বাটে ।
পান থেকে চুন খসলে পরে
শাশুড়ি ননদ খামচে ধরে ।

আর এক আছে ঢ্যামনা শশুর ;
পাকনা চুলে জ্যান্ত অসুর ।
চানের ঘরের বেড়ার ফাঁকে
কুতকুতিয়ে তাকিয়ে থাকে ।
একটু কিছু বললে তারে
নোংরা কাঁচা খিস্তি মারে ।

চেকার বাবু ব্যস্ত বেজায় ;
সাড়ে দশটায় ডিউটিতে যায় ।
সন্ধ্যেবেলা ডিউটি সেরে
ছ'টার ট্রেনে বাড়ি ফেরে ।
নাকে মুখে চারটি গুঁজে
বেরিয়ে পরে সুযোগ বুঝে ।
চাঁদবাজারের রাস্তা ধরে
ভ্যাঁপসা গলির অন্ধকারে
আস্তে ধীরে পা বাড়িয়ে
কোথায় যেন যায় হারিয়ে ।

ময়লা কি যায় কয়লা ঘষে ?
নোংরামি আর আলুর দোষে
পরকীয়ায় দু'বার ফেঁসে
টাকার জোরে গেছে বেঁচে ।
ভাগ্য ভালো দেয়নি জেলে ;
কারণ সে যে দারুন ছেলে ।

বাড়ি ফেরে রাত্রি ন'টায় ;
দু'চারখানা সঙ্গী জোটায় ;
তাস পিটিয়ে জুয়ো খেলে ;
ঢুকুর ঢুকুর বাংলা গেলে ।
জমিয়ে বসে মদের আসর ।
মেয়েটি সাজায় দুঃখের বাসর ।
অশ্রুচোখে একলা ঘরে
কখন যেন ঘুমিয়ে পরে ।
মাতাল বরের লাথির চোটে
রাত দুপুরে চেঁচিয়ে ওঠে ।
তিরিশ হাজার জুয়োয় হেরে
ঝালটি মেটায় বৌকে মেরে ।
ধাক্কা মেরে জাগায় ঠেলে ;
লাগায় ঝাঁটা মেঝেয় ফেলে ।
"লক্ষীছাড়ি, বদের হাড়ি -
খবর দিবি বাপের বাড়ি ।
বাকির দু'লাখ কাল না পেলে
ভাজবো তোকে গরম তেলে ।"

কাল চলে যায়, পরশু আসে ।
বাপ আসে না, খবর আসে ।
লক্ষ পাঁচেক দেনার চাপে
গলায় দড়ি দিয়েছে বাপে।
এমন সুখের খবর পেয়ে
ষষ্ঠী রায়ের সোনার মেয়ে
কেরোসিনের বোতল ঢেলে
সারা গায়ে আগুন জ্বেলে
চললো তখন বাপের কাছে ।
যেথায় অনেক শান্তি আছে ।
যেথায় অনেক শান্তি আছে ।

বাপ মেয়ে তো বাঁচলো মরে ;
চেকার বাবু কি আর করে ;
হাজার দশেক টাকা দিয়ে
গাঁয়ের লোকের মুখ বুজিয়ে
কায়দা করে গল্প সাজায় -
বৌ মরেছে দুর্ঘটনায় ।
পুরুত আসে, মন্ত্র পড়ে,
ঘটা করে শ্রাদ্ধ করে ।

গলদা চিংড়ি, কাতলা কষা,
দই ইলিশ আর পাবদা রসা ।
মন্ডা মিঠাই থরে থরে,
সবাই খেলো তৃপ্তি ভরে ।
বললো সবাই, এমন ছেলে
লক্ষটিতে একটি মেলে ।
সমাজ তখন চেঁচিয়ে বলে,
"দারুন ছেলে, দারুন ছেলে ।"
অন্ধ সমাজ চেঁচিয়ে বলে,
"দারুন ছেলে, দারুন ছেলে ।"
ভন্ড সমাজ চেঁচিয়ে বলে,
"দারুন ছেলে, দারুন ছেলে ।"

Regards,
Palash Mondal | palashmondalseven@gmail.com

Note: This email was sent via the Contact Form gadget on
https://sahityokonika.blogspot.com

No comments:

Post a Comment