"একাঙ্ক নাটক "
অন্তরাত্মা
বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত
[ দীপ্ত,তনু,অর্ক,শুভ্র, অঙ্কিত নিজেদের মধ্যে কথা বলছে,এমনসময় ব্যাকগ্রাউন্ডে
এক মহিলা কন্ঠস্বর ধ্বণিত হতে থাকেঃ
" মা তোমার গর্ভে দশমাস দশদিন পূরণের আগেই, এক উথাল-পাতাল আলোড়ন উঁকি মারে
তোমার জঠরের চারপাশে
খানিক বাদেই মাংস পিন্ডের ডেলাটা ঝুপ করে যখন পড়ল ডাক্তারের হাতে, তখনও বুঝিনি
আমার মৃত্যু হল, মৃত্যু হলো তোমারই মতে!
মা,আমিও তো তুমি হয়ে উঠতে পারতাম কিম্বা দিদির বোন হয়ে একসাথে হাসতে পারতাম,
গাইতে পারতাম।
মা,মাগো বলো না গো-এ লজ্জা কার???
বর্তমানের আগেই,আজ আমি এক পাতাহীন ইতিহাস।"
সূত্রধর-ইতিহাস!ইতিহাস! চলুন না আমরা সবাই না হয় ফিরে তাকাই, তেমনই কিছু
ইতিহাসের দিকে... ]
অর্ক-হ্যাঁ রে দীপ্ত, কী শুনছি! আজও কী ভ্রূণ হত্যা হয়!!
দীপ্ত - নাহলে কী এ কবিতা লেখা হতো?
অঙ্কিত - দীপ্ত ঠিকই বলেছে।
শুভ্র-হবে না কেন? এমন সব কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াবার মত মানুষ আজ আর
কোথায়?সমাজটা পুরোপুরি বদলের আগেই,তারা তো চলে গেছেন।
তনু-কাদের কথা বলছিস শুভ্র?
শুভ্র - যেমন ধর না, বিদ্যাসাগরের মত মানুষ! এঁদের কথা ভুলি কেমন করে!
অর্ক-ভুলব কেন? নারী মুক্তির লক্ষ্যে, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধাচারণ, নারী শিক্ষা
বিস্তার ,বিধবা বিবাহের প্রচলন ইত্যাদি সংস্কারমূলক কাজে বিদ্যাসাগরের কথা
আমরা তো বইতেই পড়েছি।
অঙ্কিত - শুধু কী তাই?আরও আছে।
তনু- হ্যাঁ আছে তো।আরে পড়িস নি,বাংলা গদ্যে প্রাণসঞ্চার করে, তিনিই তো গদ্যে
নতুন দিশা দেখিয়ে গেছেন।
দীপ্ত-আরে ওটা ভুলে গেলি?
অর্ক- কী? সেটা তুই-ই বল।
দীপ্ত-বাংলাভাষায় পাংচুয়েশন-এর পথিকৃৎ তো তিনিই।
তনু- তাহলে ভাব, তার আগে বাক্যের ভেতরে কোনো দাড়ি,কমা থাকত না।একবার শুরু হলে,
বাক্য চলছে তো চলছে, চলছে তো চলছেই...
অঙ্কিত - বর্ণপরিচয়ের কথা সবাই ভুলে গেলি কীকরে!
দীপ্ত,অর্ক, শুভ্র - ভুলবো কেনো?
তনু- ওটাই তো আমাদের লিখতে শিখিয়েছে।
অঙ্কিত -একদম তাই।সত্যি ভাবলে অবাক হতে হয়।আমাদের যাবতীয় কুসংস্কারও তাঁর চোখ
এড়ায় নি।
অর্ক- সে তো বটেই। কুসংস্কার দূরীকরণে অবশ্যই তাঁর ভূমিকা ছিল।তাঁদের মত
মানুষেরা, এতসব করে গেলেও, আমরা সবাই আজও কী সেভাবে বদলাতে পেরেছি!
তনু- প্রকৃত অর্থে আমরা আর পাল্টালাম কই? আজও দেখ, কন্যা ভ্রূণ হত্যা
হচ্ছে,আজও কোথাও না কোথাও, বাল্যবিবাহ ঘটে চলেছে! বলুন না, আপনারাই বলুন।ভুল
কিছু বলছি কী?
শুভ্র - ঠিকই বলেছিস তনু। তুই তো ভুল কিছু বলিস নি।
অর্ক,অঙ্কিত, দীপ্ত (একসাথে)-হ্যাঁ ঠিক-ই বলেছিস।
শুভ্র-আমরা না আধুনিক, না পুরোনো গোছের এক কিম্ভুতকিমাকার হয়ে রইলাম।
অঙ্কিত - হ্যাঁ রে বিদ্যাসাগর বা তাঁর মত মানুষের আজও আমাদের দরকার।অথচ...
[ স্বপ্নময় আলোয় ব্যাকগ্রাউন্ডে এক দীপ্তময় কন্ঠস্বরঃ ]
বারবার আঁধার ঘিরে ধরে
বারবার না কর্মের চাষ-
ভাষাহীন লজ্জার মূলে
কে ছড়াবে পবিত্র সুবাস??
আমি ঈশ্বর দেখিনি,পেয়েছি তোমায়
অবশেষে, তুমিও আজ ভূপতিত-
পড়ে থাকা গুঁড়ো গুঁড়ো কণা!
সে কণায় আমি দেখি বর্ণমালা।
তুমি বলো না সাগর
আমার ঈশ্বর-
আর কত লজ্জা লুকাবো
আর কত ক্ষত-জ্বালা শেষে
আর কত রজনীর পরে
কোনো এক কাক ভোরে
ফের ব'য়ে যাবে শুদ্ধ বাতাস???
বন্ধ হোক সেইদিন চিরতরে বিষাক্ত নিঃশ্বাস।]
অর্ক- গলাটা খুব চেনা মনে হচ্ছে না?
দীপ্ত - কার? কার কন্ঠ এটা ?
তনু - চিনলি না!ওটা আমাদের অন্তরাত্মা।চল না, তাঁকে স্মরণ করে, সত্যিকারের
একটা নতুন সকালের কাছে পৌঁছাতে একটা চেষ্টা অন্তত আমরা করি।
[স্বপ্নময় আলো ধীরেধীরে উজ্জ্বল হতে থাকে আর ওরা এগোতে থাকে সামনের দিকে।ঠিক
তখনই একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসে]
-তোমরা বেশ ঘটা করে স্মরণ করছ দেখছি।
অর্ক-কে তুমি?
-ধরে নাও না,আমি-ই) তাঁর ছায়া।
দীপ্ত, তনু, অর্ক(সকলে সমস্বরে) - বিদ্যাসাগর!!!
- না।বললাম তো, তাঁর ছায়া।
দীপ্ত, তনু, অর্ক (সকলে একসাথে )-আমরা তোমার আশীষ চাই। অভয় দাও। সমাজটাকে
সত্যি যেন আমরা বদলাতে পারি।
- শোনো আমাকে স্মরণ করার চাইতে, সে কাজেই তোমরা মন দাও।তোমাদের এই হুঁশ ফেরাই
হয়ত আগামীর আলোর ইশারা।যাও এগিয়ে যাও...
দীপ্ত, তনু, অর্ক (সকলে সমস্বরে )-আমরা এগোচ্ছি ঈশ্বর।আমরা এগোচ্ছি...
[" চল চল চল ঊর্ধগগনে বাজে মাদল "- এর তালে তালে, ওরা এগোতে থাকে সামনের
দিকে...]
(সমাপ্ত)
Regards,
বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত(শ্রীসেন) | biswajit.sengupta40a@gmail.com
Note: This email was sent via the Contact Form gadget on
https://sahityokonika.blogspot.com
অন্তরাত্মা
বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত
[ দীপ্ত,তনু,অর্ক,শুভ্র, অঙ্কিত নিজেদের মধ্যে কথা বলছে,এমনসময় ব্যাকগ্রাউন্ডে
এক মহিলা কন্ঠস্বর ধ্বণিত হতে থাকেঃ
" মা তোমার গর্ভে দশমাস দশদিন পূরণের আগেই, এক উথাল-পাতাল আলোড়ন উঁকি মারে
তোমার জঠরের চারপাশে
খানিক বাদেই মাংস পিন্ডের ডেলাটা ঝুপ করে যখন পড়ল ডাক্তারের হাতে, তখনও বুঝিনি
আমার মৃত্যু হল, মৃত্যু হলো তোমারই মতে!
মা,আমিও তো তুমি হয়ে উঠতে পারতাম কিম্বা দিদির বোন হয়ে একসাথে হাসতে পারতাম,
গাইতে পারতাম।
মা,মাগো বলো না গো-এ লজ্জা কার???
বর্তমানের আগেই,আজ আমি এক পাতাহীন ইতিহাস।"
সূত্রধর-ইতিহাস!ইতিহাস! চলুন না আমরা সবাই না হয় ফিরে তাকাই, তেমনই কিছু
ইতিহাসের দিকে... ]
অর্ক-হ্যাঁ রে দীপ্ত, কী শুনছি! আজও কী ভ্রূণ হত্যা হয়!!
দীপ্ত - নাহলে কী এ কবিতা লেখা হতো?
অঙ্কিত - দীপ্ত ঠিকই বলেছে।
শুভ্র-হবে না কেন? এমন সব কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াবার মত মানুষ আজ আর
কোথায়?সমাজটা পুরোপুরি বদলের আগেই,তারা তো চলে গেছেন।
তনু-কাদের কথা বলছিস শুভ্র?
শুভ্র - যেমন ধর না, বিদ্যাসাগরের মত মানুষ! এঁদের কথা ভুলি কেমন করে!
অর্ক-ভুলব কেন? নারী মুক্তির লক্ষ্যে, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধাচারণ, নারী শিক্ষা
বিস্তার ,বিধবা বিবাহের প্রচলন ইত্যাদি সংস্কারমূলক কাজে বিদ্যাসাগরের কথা
আমরা তো বইতেই পড়েছি।
অঙ্কিত - শুধু কী তাই?আরও আছে।
তনু- হ্যাঁ আছে তো।আরে পড়িস নি,বাংলা গদ্যে প্রাণসঞ্চার করে, তিনিই তো গদ্যে
নতুন দিশা দেখিয়ে গেছেন।
দীপ্ত-আরে ওটা ভুলে গেলি?
অর্ক- কী? সেটা তুই-ই বল।
দীপ্ত-বাংলাভাষায় পাংচুয়েশন-এর পথিকৃৎ তো তিনিই।
তনু- তাহলে ভাব, তার আগে বাক্যের ভেতরে কোনো দাড়ি,কমা থাকত না।একবার শুরু হলে,
বাক্য চলছে তো চলছে, চলছে তো চলছেই...
অঙ্কিত - বর্ণপরিচয়ের কথা সবাই ভুলে গেলি কীকরে!
দীপ্ত,অর্ক, শুভ্র - ভুলবো কেনো?
তনু- ওটাই তো আমাদের লিখতে শিখিয়েছে।
অঙ্কিত -একদম তাই।সত্যি ভাবলে অবাক হতে হয়।আমাদের যাবতীয় কুসংস্কারও তাঁর চোখ
এড়ায় নি।
অর্ক- সে তো বটেই। কুসংস্কার দূরীকরণে অবশ্যই তাঁর ভূমিকা ছিল।তাঁদের মত
মানুষেরা, এতসব করে গেলেও, আমরা সবাই আজও কী সেভাবে বদলাতে পেরেছি!
তনু- প্রকৃত অর্থে আমরা আর পাল্টালাম কই? আজও দেখ, কন্যা ভ্রূণ হত্যা
হচ্ছে,আজও কোথাও না কোথাও, বাল্যবিবাহ ঘটে চলেছে! বলুন না, আপনারাই বলুন।ভুল
কিছু বলছি কী?
শুভ্র - ঠিকই বলেছিস তনু। তুই তো ভুল কিছু বলিস নি।
অর্ক,অঙ্কিত, দীপ্ত (একসাথে)-হ্যাঁ ঠিক-ই বলেছিস।
শুভ্র-আমরা না আধুনিক, না পুরোনো গোছের এক কিম্ভুতকিমাকার হয়ে রইলাম।
অঙ্কিত - হ্যাঁ রে বিদ্যাসাগর বা তাঁর মত মানুষের আজও আমাদের দরকার।অথচ...
[ স্বপ্নময় আলোয় ব্যাকগ্রাউন্ডে এক দীপ্তময় কন্ঠস্বরঃ ]
বারবার আঁধার ঘিরে ধরে
বারবার না কর্মের চাষ-
ভাষাহীন লজ্জার মূলে
কে ছড়াবে পবিত্র সুবাস??
আমি ঈশ্বর দেখিনি,পেয়েছি তোমায়
অবশেষে, তুমিও আজ ভূপতিত-
পড়ে থাকা গুঁড়ো গুঁড়ো কণা!
সে কণায় আমি দেখি বর্ণমালা।
তুমি বলো না সাগর
আমার ঈশ্বর-
আর কত লজ্জা লুকাবো
আর কত ক্ষত-জ্বালা শেষে
আর কত রজনীর পরে
কোনো এক কাক ভোরে
ফের ব'য়ে যাবে শুদ্ধ বাতাস???
বন্ধ হোক সেইদিন চিরতরে বিষাক্ত নিঃশ্বাস।]
অর্ক- গলাটা খুব চেনা মনে হচ্ছে না?
দীপ্ত - কার? কার কন্ঠ এটা ?
তনু - চিনলি না!ওটা আমাদের অন্তরাত্মা।চল না, তাঁকে স্মরণ করে, সত্যিকারের
একটা নতুন সকালের কাছে পৌঁছাতে একটা চেষ্টা অন্তত আমরা করি।
[স্বপ্নময় আলো ধীরেধীরে উজ্জ্বল হতে থাকে আর ওরা এগোতে থাকে সামনের দিকে।ঠিক
তখনই একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসে]
-তোমরা বেশ ঘটা করে স্মরণ করছ দেখছি।
অর্ক-কে তুমি?
-ধরে নাও না,আমি-ই) তাঁর ছায়া।
দীপ্ত, তনু, অর্ক(সকলে সমস্বরে) - বিদ্যাসাগর!!!
- না।বললাম তো, তাঁর ছায়া।
দীপ্ত, তনু, অর্ক (সকলে একসাথে )-আমরা তোমার আশীষ চাই। অভয় দাও। সমাজটাকে
সত্যি যেন আমরা বদলাতে পারি।
- শোনো আমাকে স্মরণ করার চাইতে, সে কাজেই তোমরা মন দাও।তোমাদের এই হুঁশ ফেরাই
হয়ত আগামীর আলোর ইশারা।যাও এগিয়ে যাও...
দীপ্ত, তনু, অর্ক (সকলে সমস্বরে )-আমরা এগোচ্ছি ঈশ্বর।আমরা এগোচ্ছি...
[" চল চল চল ঊর্ধগগনে বাজে মাদল "- এর তালে তালে, ওরা এগোতে থাকে সামনের
দিকে...]
(সমাপ্ত)
Regards,
বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত(শ্রীসেন) | biswajit.sengupta40a@gmail.com
Note: This email was sent via the Contact Form gadget on
https://sahityokonika.blogspot.com
No comments:
Post a Comment