আপনার লেখা গল্প কিংবা কবিতাটি পোস্ট করুন এখানে। মেসেজ বক্সে লেখার শিরোনাম, লেখকের নামসহ লিখা দিন।

Name

Email *

Message *

[সাহিত্য কণিকা] New message received.

গল্প : অসভ্যতা ও সভ্যতা
গল্পকার : সৈয়দ জালাল আহমেদ চৌধুরী


''বড়লোকদের মধ্যে যারা সভ্য এদের উপরে আর কেউ যেতে পারেনা আর ছোট লোকদের মধ্যে
যারা অসভ্য ওদের নীচে আর কেউ নামতে পারেনা।''


বড়সাহেবের মুখে এতবড় কথা শুনে এলাকার মেম্বার থ হয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললো,
বড় সাহেব তার মানে আপনি আমাকে অপমান করছেন।


-না। অপমানবোধ যার অধিকারেই পড়েনা তার আবার কিসের অপমান! আরে, তুমিতো এলাকার
কিছু মুর্খলোকের মেম্বার। তবুও ভাল জানতাম, যদি আমার সামনে ধরা না পড়তে। আর
কখনও আমার সামনে সোজা হয়ে দাঁড়াবার নিষ্ফল আবেদন করোনা।


-শুধু শুধু আমায় কেন অপবাদ দিচ্ছেন। আপনার গোয়ালের গরু আমার লোক চুরি করেনি।
তবে যারা চুরি করেছে, তাদের নাম আমি জানি। তাদের আমি খুব ভাল করে চিনি। কিন্তু
দু:খিত, তাদের নাম কখনও আপনাকে জানাতে আমি বাধ্য নই।


-তার মানে চোরের মায়ের বড় গলা। তোমার মতো লম্পটদের মূর্খরা কেন যে ভোট দেয়,
আমার মাথায় ঢুকেনা। মানুষ সবগুলো কেন যে এতমূর্খ হয় ভেড়ার দলের মতো, আমার বোধে
কাজ করেনা।


-ভুল করছেন বড়সাহেব। বিদেশে থাকেন। বড় চাকুরী করেন। বাণিজ্যও করেন। সত্য। দেশে
জমিদারী আছে সত্য। মানি। কিন্তু মানুষ চিনতে আপনারা ভুল করেন।


-আচ্ছা, হা-হা-হা। অনেকদিন হাসিনি । তো তোমার যোগ্যতা আছে বটে। কারণ আমাকে
হাসাতে পেরেছো। হাসাতে পারার যোগ্যতা অর্জন করেছো।


-আমি আপনাকে হাসাইনি। আপনি এলাকায় যখন হাঁটেন হাতে থাকে আপনার একটি লাঠি। লাঠি
দিযে সব নাড়াচাড়া করেন, লাঠির উপরই আপনার আক্কেল আর সব বিশ্বাস। আর আমার হাতে
কোন লাঠি থাকেনা। ধূলি-বালির উপর আমার পা পড়ে। মাটির উপর আমার সমস্থ ভর ও
বিশ্বাস। ধূলোবালিতে মাখা মাটির মানুষের সাথে আমি একত্রে বাস করি।


-আচ্ছা। আর আমি বাতাসের উপর হাঁটি। ও, আমাকে জ্ঞান দেয়া হচ্ছে, তাইনা?


-না আমি আপনাকে অপমান করার জন্য বলিনি। আমাকে এবং দেশের মাটিতে মাখা
মানুষগুলোকে দয়া করে মূর্খ বলবেন না। আমার ইগোতে লাগে। কারণ ওরা নীরিহ হতে
পারে, ওরাও আমাদের মতো মানুষ। মূর্খ নয়।এটা আমাদের ভুল ধারণা। দয়া করে একথাটি
উইথড্র করুন।


-আচ্ছা। চুরি করেছোতো সকলে মিলে। এবার দয়া করে গরুগুলো ফেরত দাও।তারপর না হয়
উইথড্র করবো।


-ভুল করছেন। আপনি যেমনি সন্মানিত জমিদার, আমিও তেমনি গরীব মেম্বার। আপনি
জমিদারী হাওলাতে থাকেন আর আমি এলাকার লোকের সাথে মিলেমিশে গরীবি হাওলাতে থাকি।
রেসিও হিসাব করলে আমরা দুজন সমানভাবে যার যার অবস্থানে সন্মানিত।
- তা ঠিক বলেছো। তুমি যেহেতু এলাকার মেম্বার। আমার কাছে না হও, মূর্খগুলোর
কাছেতো তুমি বেশ সন্মানিত। সেইদৃষ্টিকোন থেকে তোমাকে জানাই একটি মূর্খ ধন্যবাদ



- বড়সাহেব, ধন্যবাদ দেয়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করছি। শুনুন বড়সাহেব,
আপনাকে ইচ্ছে করলে ফেরত দিতে পারতাম মূর্খ শব্দটা - মূর্খ জমিদার বলে। ছোটবেলা
থেকে টাকাপয়সার ভিতরে মানুষ হওয়ার সুযোগ পাইনি বটে, তবে মসজিদে মক্তবে স্কুলে
ভার্সিটিতে গিয়েছি, আদর্শের ভিতরে মানুষ হয়েছি। তাই শুনে রাখুন, আপনার মুখে যা
সভ্যতা, আমার মুখদিযে বের হলে লোকে বলবে অসভ্যতা।


-যার মুখে যেটা বেমানান সে বলবে কেমন করে?


-না বড়সাহেব, আদর্শ দিয়ে মানুষ হয়েছি, আদর্শের আয়নায় আমি সব দেখতে পাই যা আপনি
অন্ধকারে কিছুই দেখতে পান না।

-তোমার মুন্ডুপাত করে দিলে আমি শান্তি পেতাম। কিন্তু মূর্খের দল তোমার সাথে
দলবদ্ধ বলে কিছুই করলাম না।

-হা-হা-হা, আমি তো আপনার শত্র নই। আপনার দুই-চারটা গরু এনে দিতে পারি। তবে
ডাকাতের দলে আমি নিহত হবো। আপনি যদি চান আমি অপারেশন শুরু করে দিতে পারি। কারণ
আপনি জমিদার হলেও আমার এলাকার একজন নিরীহ সন্মানিত বাসিন্দা।

বড়সাহেব চিন্তিতে হয়ে পড়লেন। একজন সৎ মেম্বার এর সাথে মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার
কারণে রাগের বশবর্তী হয়ে অনেক বাক্য বিনিময় করলেন। এখন কি করবেন ঠিক বুঝে উঠতে
পারছেন না। ডাকাতের দল এর কোন বিশ্বাস নেই। কোথাকার পানি কোথা গিয়ে গড়ায়? তিনি
কপাল থেকে দু'চার ফোঁটা ঘাম ঝাড়লেন।

আকাশের কোণ থেকে কালো মেঘের ভেলা তেড়িয়ে ছুটে আসছে। বাতাসের স্বাভাবিকতা নষ্ট
হয়ে অস্বাভাবিক দূরন্ত হযে উঠেছে। স্যোঁ স্যোঁ শব্দে ঘরের প্রতিটি দরজা-জানালা
নড়ছে, বাড়ি খাচ্ছে আর চিৎকার করছে – জমিদার এর মাথার উপর যেন আজ আকাশটা ভেঙ্গে
পড়বে। তাড়াতাড়ি বাসায় ঢুকে দরজা-জানালা বন্ধ করলেই যেন বাঁচে।

বিপদে পেলে জমিদার এর আল্লাহভীতি বেড়ে যায়। বিপদ কেটে গেলে মানুষের সাথে অহরহ
গন্ডগোল পাঁকাতে মজা পায়। জামিদার এখন তা হাড়ে হাড়ে উপলদ্ধি করছে। কারণ বয়স
হয়েছে। শোধরানো দরকার।

বাপরে, আকাশের যে কি অবস্থা! আর দেরী না করে জমিদার মেম্বারের মুখের পানে
তাকালো। মেম্বারের মুখে ভয়ের কোন ছাপ দেখতে পেলনা। জমিদারের মনে আরও ভয় বেড়ে
গেলো। আকাশ থেকে ঠাডা যে ভাবে পড়ছে, যেন তার মাথার উপর পড়বে – মাথা ও দেহটা
যেন এক্ষুণি খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাবে। তারপর তার কঠিন মৃত্যু হবে।

আফসোস! কবরের প্রস্তুতি ভাল করে নেয়া হয়নি। জমিদার হুতাশ মনে পকেটে তবছি আছে
কিনা হাতদিয়ে নেড়ে দেখে নিল – তারপর মাথার টুপি ঘুরিয়ে ঠিকঠাক করলো - তারপর
একহাতে চাবির তোড়া ধরে আর অন্যহাতে শক্ত করে লাঠির উপর ভরদিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
মেম্বার আমি জানি তুমি এইকাজ করতে পারনা। আমার সন্দেহটা আসলে তোমার উপর না।
তোমার এলাকার উপর। আমার অনেক আছে।আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছে। দুইচারটা গরুর
জন্য তুমি প্রাণ দেবে এ আমি চাইনা। তোমার বউবাচ্চা আছে, যাও তাদের কোলে ফিরে
যাও।আল্লাহাফেজ।

মেম্বারও ব্যাপারটি বুঝতে পারলো। তারপর মনে মনে পরিস্থিতির কথা ভাবতে ভাবতে
হাঁটা শুরু করে দিল। ঝড়-বৃষ্টির বাড়ন্ত গতি দেখে বাতাসের গতিতে ভিজে ভিজে
বাড়ির দিকে ছুটতে লাগলো।

--সমাপ্ত--

Regards,
Syed Jalal Ahmed Chy | chowdhurysyedjalalahmed@gmail.com

Note: This email was sent via the Contact Form gadget on
https://sahityokonika.blogspot.com