আপনার লেখা গল্প কিংবা কবিতাটি পোস্ট করুন এখানে। মেসেজ বক্সে লেখার শিরোনাম, লেখকের নামসহ লিখা দিন।

Name

Email *

Message *

রোজাভা বিপ্লব

রাষ্ট্রবিহীন জনগোষ্ঠী হিসেবে কাশ্মীরি,ফিলিস্তিনি, রোহিঙ্গাদের নাম উচ্চারিত হলেও কুর্দি জনগোষ্ঠী তেমন মনোযোগ পায়নি বিশ্বের।মধ্যপ্রাচ্যের এই জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি,তারা সেখানকার চতুর্থ বৃহৎ আদিবাসী। 


আয়তনে ৩ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের কুর্দিস্তানে রয়েছে আড়াই থেকে তিন কোটি কুর্দির বাস।কিন্ত ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর নিজস্ব দেশ নেই তাদের স্বপ্নভুমি কুর্দিস্তান চার ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে।তুরস্ক, ইরাক,ইরান ও সিরিয়ায় এই চারদেশেই রয়েছে কুর্দিস্তানের  অংশ। এছাড়া আর্মেনিয়ায় রয়েছে স্বল্পসংখ্যক কুর্দির বসবাস।      

কুর্দিস্তানের জাতীয় পতাকা       কুর্দিস্তানের জাতীয় পতাকা


কুর্দিস্তানের মানচিত্র   

উত্তর পূর্ব সিরিয়া বা রোজাভা  


সিরিয়ার উত্তর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত কুর্দিস্তানের পশ্চিম অংশ যেটাকে কুর্দি ভাষায় রোজাভা বলা হয়।আফ্রিন,জাযিরা,ইউফ্রেটিস,রাক্কা,কোবানে,দেইর ইজ-জুর এবং মানবিজ অঞ্চলগুলো নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত রোজাভা গঠিত।  


২০১২ সালে সিরিয়া গৃহযুদ্ধের প্রাক্কালে এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক বিপ্লবের মাধ্যমে রোজাভার পথচলা শুরু হয়।নিকট ইতিহাসে এমন বিপ্লব স্পেনিশ গৃহযুদ্ধের সময় হয়েছিলো ১৯৩০ সালের  শেষ দিকে একদল এনার্কিস্ট বিপ্লবীর দ্বারা । জর্জ অরওয়েল সে বিপ্লব প্রত্যক্ষ করেন।

     

রোজাভা বিপ্লবে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে নারীরা রয়েছেন।মুল সিরিয়ান গৃহযুদ্ধের সাথে সরাসরি জড়িত না হলেও রোজাভাকে ভয়ংকর আত্মঘাতী বোমা হামলা মোকাবেলা করতে হয়।


ইরাকের কুর্দিশ আঞ্চলিক সরকার (KRG) এবং তুরস্ক সরকারের অসহযোগীতার কারণে বিদেশি সাংবাদিকদের রোজাভায় প্রবেশ কষ্টসাধ্য  ফলে এখানকার দারুণ নারীবাদী বিপ্লবের খবর বিশ্বমিডিয়ার আলোচনায় আসছে না।এছাড়া তুরস্ক সরকার রোজাভাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে যেটা সেখানকার রাজনৈতিক  দল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন পার্টি (PYD)  এর বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডা বলা যায়।  


 PYD এর সামরিক শাখার নাম পিপল'স প্রটেকশন ইউনিট (YPG),এবং  উইমেন্স প্রটেকশন ইউনিট (YPJ) নারীদের দ্বারা গঠিত আত্নরক্ষামুলক নারী উইং।   



উইমেন্স প্রটেকশন ইউনিট এর যোদ্ধারা

    

প্রশাসনিকভাবে রোজাভা সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।যেটা এনার্কিজম এবং উদারনৈতিক সমাজতান্ত্রিক আদর্শ দ্বারা অনুপ্রানিত। রাষ্ট্রীয়ভাবে রোজাভা নারী-পুরুষের সমতা,ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, বহুত্ববাদী সমাজ,ধর্মীয় সহিষ্ণুতা,রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, পরিবেশের সুরক্ষা এসব বিষয়ে প্রতিশ্রুতিশীল।                  


সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রোজাভার রাজনৈতিক সৌন্দর্য, আঞ্চলিক অধিবেশনে ননকুর্দিশ বিশেষকরে আরব,সিরিয়ান,তুর্কি,অ্যাসেরিয় সবাই কুর্দিদের   মতোই সমান সুযোগ পায় মত প্রকাশের ক্ষেত্রে। 


রোজাভা'র স্থানীয় সরকার পরিচালিত হয় গ্রামবাসীর দ্বারা, তারা নিজেদের স্বাস্থ্য, চাকরি, সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গুলো নিজেরাই নেন পাশাপাশি বাল্যবিবাহ,  ধর্মীয় কুসংস্কার রোধে কাজ করেন।  স্থানীয়ভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে ঐক্যমত না  হলে  গ্রামবাসীর প্রতিনিধিগণ আঞ্চলিক অধিবেশনে যোগ দেন। সেখানে তারা গ্রামের প্রতিনিধি হিসেবে গ্রামবাসীর নিকট দায়বদ্ধ থাকেন এবং তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করেন।                   

তুরস্কের রোজাভা আগ্রাসন এবং   পিকেকে 

আবদুল্যাহ ওকালান যিনি একজন কুর্দি নেতা ১৯৭৮ সালে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (PKK)  গঠন করেন।মার্মারা সাগরের একটা দ্বীপে তিনি তুর্কি সরকারের নিকট বন্দি ছিলেন। বন্দিজীবনে তিনি এনার্কিস্ট লেখক মারি বুকচিনের  আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে   কুর্দিদের জন্য একটা স্বাধীন এনার্কিস্ট রাস্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেন।যার ফলাফল হিসেবে PKK এর আত্মপ্রকাশ হয়।   

ছবি : আবদুল্লাহ ওকালান 


প্রতিষ্ঠার ছ’বছর পর  PKK তুর্কি সরকারের সাথে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয় ফলে ৪০ হাজার বেসামরিক লোক নিহত এবং এক লক্ষ কুর্দি বাস্তুচ্যুত হয়।


১৯৯০ এর দিকে  PKK স্বাধীন রাষ্ট্রের পরিবর্তে স্বায়ত্তশাসনের জন্য রাজনৈতিকও সাংস্কৃতিক আন্দোলন ডাক দেয়।পাশাপাশি সশস্ত্র সংগ্রামও অব্যাহত রাখে।    


২০১৩ সালে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় PKK

 

কিন্তু ২০১৫ সালের জুলাইয়ে যুদ্ধবিরতি অকার্যকর হয়ে পড়ে যখন  সিরিয়া সীমান্তের সুরুকে শহরে এক ভয়াবহ আত্নঘাতী বোমা হামলায় ৩৩ জন তরুন এক্টিভিস্ট নিহত হন,এই ঘটনায় ISIS কে দায়ী করা হয়।


ঐ ঘটনার পর তুরস্ক, ISIS এবং YPG মধ্যকার   ত্রিমুখী সংঘাত শুরু হয়। ফলে কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।  


আগস্ট ২০১৬, এসময় এরদোয়ান সরকার উত্তর সিরিয়া  অভিমুখে ব্যাপক সেনাবাহিনী ও সাঁজোয়া ট্যাঙ্ক নিয়ে অগ্রসর হয় এবং তুর্কি আর্মি জোরপূর্বক জারাব্লুস শহর দখল করে নেয়।


ফলে রোজাভার YPG নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স  (SDF) পিছু হটে আফ্রিন শহরের কুর্দি ঘাঁটিতে আশ্রয় নেয়।


এরপর ২০১৮ পুনরায় তুর্কি আর্মি আফ্রিন আক্রমণ করে সেখান থেকে YPG কে উৎখাত করে ব্যাপক ধ্বংশযজ্ঞ চালায়  ফলে প্রচুর বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারান।            



সিরিয়া গৃহযুদ্ধের ফলে উত্থিত নতুন স্টেট রোজাভা ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য দৃষ্টান্ত হবে যদি সেখানে শান্তি বজায় থাকে এবং যে আদর্শকে ধারণ করে এর জন্ম হয়েছে সেটার যথাযথ প্রয়োগ করতে পারে।                 

                 

Reference: BBC,VICE, WIKIPEDIA                                                             

                                    




নেকড়েরা স্বয়ং এখন মেষপালকের বেশে #দেবাশিস বসু

#কবিতা
#নেকড়েরা স্বয়ং এখন মেষপালকের বেশে
#দেবাশিস বসু
#০৪/০৫/২০২০

যুদ্ধ শেষ
নেকড়েরা স্বয়ং এখন মেষপালকের বেশে

যুদ্ধ শেষ
বিধ্বস্ত সৈনিক এখন ঘর গোছাতে ব্যস্ত
ঘর গোছাতে ব্যস্ত
সেই সব সেনানী
যারা শস্ত্রের যোগান দেবে বলেছিল
ঘর গোছাতে ব্যস্ত
আত্মসমর্পণকারী শত্রুসেনাদল
কারণ
নেকড়েরা স্বয়ং এখন মেষপালকের বেশে

দু' চারটে যৌবন গলে গেছে
আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে গলে পড়া
সোনালী রোদ্দুরের মতো
আঙ্গুলের ডগায়
এখনো পোস্টারের কালির স্পষ্ট দাগ
কিউবিকলের একটা ন‍্যাপথিলিনও
চিরকালের মতো আলাদা করতে পারিনি
শুধু অ‍্যামোনিয়ার ঝাঁঝ
আর বেড়েছে বারুদ বাষ্প
কোনো বিপ্লব হয়নি
খালি ভিড় বাড়ানো সারিবদ্ধ গড্ডলের দল
আভূমি কুর্ণিশ করেছে গিলোটিনে
যুদ্ধ শেষ
নেকড়েরা স্বয়ং এখন মেষপালকের বেশে

মনে আছে মালবিকা,
এক মুখ যে দাঁড়ি
তোমায় বুর্জোয়া কলেজ ছাড়িয়েছিল
বলেছিল,'পোতাশ্রয়ের জাহাজ হবার জন্য তোমার জন্ম নয়'
কিংবা গা শিরশির করা রাতে
গ্রুপ মিটিংয়ের সুযোগ নিয়ে
যারা চেয়েছিল অর্ধেক শরীর
কাফকা কামু পাস্তেরনাক থেকে
চেকভ দস্তয়েভস্কি হয়ে
যে পথ শেষ হয়েছিল
নেরুদা নাজিম হিকমতের কারাগারে
যুদ্ধ শেষ
নেকড়েরা স্বয়ং এখন মেষপালকের বেশে

মনে আছে মালবিকা,
সেই জঙ্গলে অন্ধকার রাত সহস্র মশার কামড়ে
সাপ আর জোঁকেদের নিজস্ব বাসরে
মোমবাতির আলোয় নিষিদ্ধ বই
অথবা মুড়িবাদামের গ্রুপ মিটিংয়ের স্মৃতি
মনে পড়ে
শাড়ীর ভেতর লুকোনো পোস্টারের বান্ডিল
বৎসরান্তে বাড়ি ফেরা
মধ্যরাতে
এক ঝাঁক কুকুরের ডাক সঙ্গী করে
মায়ের সন্ত্রস্ত মুখ
আর মুঠোভর্তি লক্ষ্মীর নাড়ু
বেডরুম থেকে ভেসে আসা চাপা গজরানি
আর ঘুনধরা খাটে
পাশ ফিরে শোয়ার ক‍্যাঁচকোঁচ শব্দ

মনে পড়ে,
যেবার তুমি হাঁফাতে হাঁফাতে এসেছিলে
ভাঙা শিবমন্দিরের বটগাছের আড়ালে ,
অন্ধকারে শরীর লুকিয়ে
মহাকালের কালো রথ
পাশ দিয়ে ছুটে গিয়েছিল সশব্দে ,
সঙ্গে নিয়ে এক রাশ নাক-জ্বালানো ধুলো
বোতাম খুলে শুনেছিলাম ,
তোমার গোলাপী বুকে হাপরের শব্দ
পাঁজরের ওপরে স্পষ্ট ঘষার দাগ,
শিরাগুলো নীল হয়ে আছে ।

মালবিকা ,
এখন যুদ্ধ শেষ
সৈনিকেরা
যার যার নিজস্ব নিরাপদ আশ্রয়ে
নেকড়েরা স্বয়ং এখন মেষপালকের বেশে

দুঃখ কোরো না মালবিকা ,
কোনো সারমেয়
বিষাক্ত করবেনা তোমার সমাধিস্তম্ভ
এখন শুয়ে থাকো,তবে ঘুমিয়ে পড়ো না
তোমার গর্ভে এখনো আছে যে দেবশিশু
সেই বেজন্মারাই জন্ম দেবে
হয়তো নতুন বিপ্লব
হয়তো সেই মে ডের দিনে
আবার শহীদস্তম্ভ উপড়ে জেগে উঠবে তুমি

নতুন তুমি আর তোমার সবুজ পৃথিবী

Regards,
দেবাশিস বসু | debasisbasuroy1@gmail.com

Note: This email was sent via the Contact Form gadget on
https://sahityokonika.blogspot.com